মোটর নষ্ট হয়েছে কিনা কিভাবে বোঝা যাবে

মোটর (Motor) একটি ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ডিভাইস যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। মোটর বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি এবং মেশিনে ব্যবহৃত হয়, যেখানে যান্ত্রিক গতি বা বল প্রয়োজন।

মোটর কি? 

মোটর কত প্রকার ?

মোটরের কাজ কি? 

মোটর কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়?

মোটর নষ্ট হয়েছে কিনা কিভাবে বোঝা যাবে?

মোটরের প্রকারভেদ

  1. ডিসি মোটর (DC Motor):
    • পার্মানেন্ট ম্যাগনেট ডিসি মোটর (PMDC Motor): এই মোটরগুলোতে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
    • শান্ট মোটর (Shunt Wound DC Motor): এই মোটরে আর্মেচার এবং ফিল্ড কয়েল সমান্তরাল সংযুক্ত থাকে।
    • সিরিজ মোটর (Series Wound DC Motor): এই মোটরে আর্মেচার এবং ফিল্ড কয়েল ক্রমিকভাবে সংযুক্ত থাকে।
    • কম্পাউন্ড মোটর (Compound Wound DC Motor): এই মোটরে শান্ট এবং সিরিজ উভয় ধরনের কয়েল ব্যবহৃত হয়।
  2. এসি মোটর (AC Motor):
    • ইন্ডাকশন মোটর (Induction Motor): এটি সিঙ্ক্রোনাস গতির চেয়ে কম গতিতে চলে। এটি আবার দুটি প্রকার:
      • সিঙ্গেল-ফেজ ইন্ডাকশন মোটর (Single-Phase Induction Motor)
      • থ্রি-ফেজ ইন্ডাকশন মোটর (Three-Phase Induction Motor)
    • সিঙ্ক্রোনাস মোটর (Synchronous Motor): এই মোটর সিঙ্ক্রোনাস গতিতে চলে।
  3. স্পেশাল মোটর (Special Motors):
    • স্টেপার মোটর (Stepper Motor): এই মোটর নির্দিষ্ট কোণ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ঘোরে।
    • সার্ভো মোটর (Servo Motor): এই মোটর নির্দিষ্ট অবস্থান, গতি এবং ত্বরান্বিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

মোটরের কাজ

মোটরের প্রধান কাজ হল বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা। এই শক্তি বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক কাজ সম্পাদন করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ঘূর্ণন, পাম্পিং, কম্প্রেশন ইত্যাদি।

মোটরের ব্যবহার

  1. গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি:
    • ফ্যান, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মিক্সার, জুসার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদিতে মোটর ব্যবহৃত হয়।
  2. শিল্প এবং উৎপাদন:
    • বিভিন্ন প্রকার মেশিন টুল, কনভেয়ার বেল্ট, কম্প্রেসার, পাম্প, লিফট ইত্যাদিতে মোটর ব্যবহৃত হয়।
  3. পরিবহন:
    • গাড়ি, বাইক, ইলেকট্রিক গাড়ি, ট্রেন ইত্যাদিতে মোটর ব্যবহৃত হয়।
  4. অটোমেশন এবং রোবোটিক্স:
    • বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এবং রোবোটিক্সে মোটর ব্যবহৃত হয়।
  5. এভিয়েশন এবং স্পেস:
    • এয়ারক্রাফট, ড্রোন, স্পেসক্রাফট ইত্যাদিতে মোটর ব্যবহৃত হয়।
  6. মেডিকেল সরঞ্জাম:
    • বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইস, যেমন ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার, পাম্প, ইমেজিং ডিভাইস ইত্যাদিতে মোটর ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রনিক্স এর কাজ শিখতে গেলে কি কি কম্পোনেন্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জানা লাগবে দেখুন:বিস্তারিত

👉মোটর নষ্ট হয়েছে কিনা কিভাবে বোঝা যাবে?

মোটর নষ্ট হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার পদ্ধতি এবং লক্ষণ রয়েছে। নিচে কিছু সাধারণ পদ্ধতি এবং লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

লক্ষণ

  1. অস্বাভাবিক শব্দ:
    • মোটর চালু করলে যদি অস্বাভাবিক শব্দ (যেমন গর্জন, ঝনঝন, বা কাঁপানো) শোনা যায়, তবে মোটরে সমস্যা থাকতে পারে।
  2. উচ্চ তাপমাত্রা:
    • মোটর অস্বাভাবিকভাবে গরম হলে এটি নষ্ট হতে পারে।
  3. কম্পন:
    • মোটর চালু করলে অতিরিক্ত কম্পন হলে এটি সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
  4. ধোঁয়া বা পোড়া গন্ধ:
    • মোটর থেকে ধোঁয়া বের হওয়া বা পোড়া গন্ধ পাওয়া গেলে এটি নষ্ট হতে পারে।
  5. মোটর চালু না হওয়া:
    • মোটর চালু না হলে বা চালু হয়ে দ্রুত বন্ধ হয়ে গেলে এটি নষ্ট হতে পারে।

পরীক্ষার পদ্ধতি

  1. ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন:
    • মোটরের বাহ্যিক অংশ পরীক্ষা করুন। পুড়ে যাওয়া, ফাটা বা অন্যান্য দৃশ্যমান ক্ষতি চিহ্নিত করুন।
    • মোটরের কন্ডাক্টর, তার বা সংযোগগুলি পরীক্ষা করুন।
  2. মাল্টিমিটার ব্যবহার:
    • প্রতিরোধ পরিমাপ:
      1. মাল্টিমিটারকে প্রতিরোধ (Ohms) মোডে সেট করুন।
      2. মোটরের স্ট্যাটর উইন্ডিং এর প্রান্তে প্রোব সংযুক্ত করুন।
      3. সাধারণত, কম প্রতিরোধ (একটি কয়েক ওহম) দেখা যাবে। যদি প্রতিরোধ অসীম (open circuit) বা খুব কম (short circuit) হয়, তাহলে মোটর নষ্ট হতে পারে।
    • ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট:
      1. মেগার ব্যবহার করুন (insulation tester)।
      2. মোটরের স্ট্যাটর এবং মাটির (ground) মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করুন। এটি সাধারণত কয়েক মেগাওহম বা তার বেশি হওয়া উচিত।
  3. মোটর চালু পরীক্ষা:
    • মোটর সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগে চালু করে দেখুন। মোটর সঠিকভাবে চালু হয় কিনা এবং নির্ধারিত গতিতে চলে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
  4. বিয়ারিং পরীক্ষা:
    • মোটরের বিয়ারিং ঘোরানো বা ঘূর্ণন পরীক্ষা করুন। যদি বিয়ারিং আটকে থাকে বা মসৃণভাবে না ঘোরে, তাহলে বিয়ারিং সমস্যা থাকতে পারে।
  5. মোটর কন্ট্রোল সার্কিট পরীক্ষা:
    • মোটরের কন্ট্রোল সার্কিট বা স্টার্টার পরীক্ষা করুন। যদি কন্ট্রোল সার্কিট বা স্টার্টারে সমস্যা থাকে, তাহলে মোটর চালু হবে না।
  6. কম্প্রেশন এবং প্রেশার টেস্ট (DC মোটরের জন্য):
    • মোটরের আর্মেচার এবং ব্রাশ পরিমাপ করে দেখুন।

উপসংহার

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে আপনি মোটরের অবস্থা নির্ধারণ করতে পারেন। যদি মোটরে সমস্যা থাকে বা এটি নষ্ট হয়, তবে এটি মেরামত করা বা পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে। মোটরের নষ্ট হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে এটি ব্যবহার না করে একজন পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত।

রেজিস্টার এর মান বের করা শিখুন খুব সহজে:VIDEO

Related search:

১ ঘোড়া মটর দাম কত
হাফ ঘোড়া মটর এর দাম গাজি
গাজী সাবমারসিবল মটর এর দাম
পেড্রোলো ওয়াটার পাম্প 0.5 hp দাম বাংলাদেশে
পাম্পের হেড কাকে বলে
ঝুরি পাম্প
পানি তোলা মটর
আর এফ এল ১ ৫ ঘোড়া পাম্পের দাম কত

Leave a Comment