ইন্ডাক্টর কি ?ইন্ডাক্টর কত প্রকার? ইন্ডাক্টরের কাজ কি? ইন্ডাক্টর কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়

ইন্ডাক্টর হলো একটি প্যাসিভ ইলেকট্রনিক উপাদান যা ইলেকট্রিক কারেন্ট প্রবাহের প্রতিরোধের মাধ্যমে একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে এবং সংরক্ষণ করে। এটি সাধারণত একটি তারের কয়েল দিয়ে তৈরি হয় এবং এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো ইন্ডাকট্যান্স, যা হেনরি (H) এককে পরিমাপ করা হয়।

ইন্ডাক্টরের প্রকারভেদ:

ইন্ডাক্টর বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, প্রধানত তাদের গঠন, উপাদান, এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। কিছু সাধারণ প্রকারের ইন্ডাক্টর হলো:

  1. এয়ার কোর ইন্ডাক্টর (Air Core Inductor): এটি কোনও চৌম্বকীয় কোর ছাড়া কেবল কয়েল দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
  2. ফেরাইট কোর ইন্ডাক্টর (Ferrite Core Inductor): এটি ফেরাইট চৌম্বকীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় এবং সাধারণত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ফিল্টার এবং পাওয়ার অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।
  3. ল্যামিনেটেড কোর ইন্ডাক্টর (Laminated Core Inductor): এটি চৌম্বকীয় কোরের বিভিন্ন স্তর দিয়ে তৈরি হয় এবং সাধারণত পাওয়ার ট্রান্সফরমার এবং রিয়াক্টর হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
  4. টরয়েডাল ইন্ডাক্টর (Toroidal Inductor): এটি ডোনাট-আকৃতির কোর দিয়ে তৈরি হয় এবং কম ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স (EMI) সহ উচ্চ-দক্ষতা ফিল্টার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ইন্ডাক্টরের কাজ:

  1. ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন: ইন্ডাক্টর একটি পরিবর্তনশীল কারেন্টের মাধ্যমে একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে এবং কারেন্ট পরিবর্তনের প্রতিরোধ করে।
  2. এনার্জি সংরক্ষণ: ইন্ডাক্টর একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে এনার্জি সংরক্ষণ করে এবং যখন প্রয়োজন হয় তখন এটি রিলিজ করে।
  3. ফিল্টারিং: ইন্ডাক্টরকে ইলেকট্রনিক সার্কিটে ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির সংকেতকে ব্লক বা পাস করতে সাহায্য করে।

ইন্ডাক্টরের ব্যবহার:

ইন্ডাক্টর বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

  1. পাওয়ার সাপ্লাই: রেগুলেটর, চোকস এবং ট্রান্সফরমারে ব্যবহৃত হয়।
  2. ফিল্টার সার্কিট: অডিও এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ফিল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  3. টিউনিং সার্কিট: রেডিও এবং টেলিভিশন টিউনিং সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।
  4. ইলেকট্রনিক ডিভাইস: বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রনিক্স এর কাজ শিখতে গেলে কি কি কম্পোনেন্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জানা লাগবে দেখুন:বিস্তারিত

কিভাবে বোঝা যাবে ইন্ডাক্টর নষ্ট:

ইন্ডাক্টর নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ ও পরীক্ষার পদ্ধতি রয়েছে। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণ ও পরীক্ষার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

লক্ষণ:

  1. দৃশ্যমান ক্ষতি:
    • পুড়ে যাওয়া বা তাপগত সমস্যা: ইন্ডাক্টরের উপর যদি পুড়ে যাওয়া বা তাপগত সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে এটি নষ্ট হতে পারে।
    • ভাঙা বা ফাটা: যদি ইন্ডাক্টরের কোর বা তার ভেঙে যায় বা ফাটে, তাহলে এটি কাজ করবে না।
  2. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ত্রুটি:
    • ডিভাইস ঠিকমতো কাজ না করা: যদি কোনও ডিভাইস ঠিকমতো কাজ না করে বা অস্বাভাবিক আচরণ করে, তবে এটি ইন্ডাক্টরের সমস্যার কারণে হতে পারে।

রেজিস্টার এর মান বের করা শিখুন খুব সহজে:VIDEO

পরীক্ষার পদ্ধতি:

  1. ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন:
    • ইন্ডাক্টরের ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন করুন এবং উপরে উল্লেখিত কোনও দৃশ্যমান ক্ষতির লক্ষণ আছে কিনা দেখুন।
  2. মাল্টিমিটার ব্যবহার:
    • রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা: মাল্টিমিটারে রেজিস্ট্যান্স মোড নির্বাচন করুন এবং ইন্ডাক্টরের লিডগুলির মধ্যে রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করুন।
      • পদ্ধতি:
        1. মাল্টিমিটারকে রেজিস্ট্যান্স মোডে রাখুন।
        2. মাল্টিমিটার প্রোবগুলি ইন্ডাক্টরের লিডের সাথে সংযুক্ত করুন।
        3. রেজিস্ট্যান্স পড়া দেখুন: একটি ভাল ইন্ডাক্টরের রেজিস্ট্যান্স সাধারণত খুব কম হবে (প্রায় শূন্য ওহম)। যদি রেজিস্ট্যান্স অসীম হয় বা অনেক বেশি হয়, তাহলে ইন্ডাক্টরটি নষ্ট হতে পারে।
  3. ইন্ডাকট্যান্স পরীক্ষা:
    • ইন্ডাক্টর টেস্টার বা মাল্টিমিটার যেটিতে ইন্ডাকট্যান্স পরিমাপ করার অপশন আছে তা ব্যবহার করে ইন্ডাকট্যান্স পরিমাপ করুন।
      • পদ্ধতি:
        1. মাল্টিমিটার বা ইন্ডাক্টর টেস্টারকে ইন্ডাকট্যান্স মোডে রাখুন।
        2. প্রোবগুলি ইন্ডাক্টরের লিডের সাথে সংযুক্ত করুন।
        3. পরিমাপ করা মানটি ইন্ডাক্টরের নামমাত্র মানের সাথে তুলনা করুন। যদি মানটি অনেক কম হয় বা না আসে, তাহলে ইন্ডাক্টরটি নষ্ট হতে পারে।
  4. আরসিএল মিটার ব্যবহার:
    • আরও সঠিক পরীক্ষার জন্য, আরসিএল (RCL) মিটার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা রেজিস্ট্যান্স, ক্যাপাসিট্যান্স এবং ইন্ডাকট্যান্স পরিমাপ করতে পারে।

Leave a Comment