ক্যাপা‌সিটর কি, কিভা‌বে কাজ ক‌রে, কেন ব্যবহার করা হয়

ক্যাপাসিটর কি. ক্যাপাসিটর কত প্রকার, ক্যাপাসিটর এর কাজ কি ?ক্যাপাসিটর কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়

ক্যাপাসিটর হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয় করে। এটি দুটি পরিবাহী প্লেট এবং একটি ডাইলেকট্রিক (অপরিবাহী পদার্থ) দিয়ে তৈরি। যখন দুটি প্লেটে ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, তখন চার্জগুলি প্লেটে সঞ্চিত হয় এবং একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে।

ক্যাপাসিটরের প্রকারভেদ:

ক্যাপাসিটর বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, প্রধানত তাদের নির্মাণ, উপাদান এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। কিছু সাধারণ প্রকারের ক্যাপাসিটর হলো:

  1. সিরামিক ক্যাপাসিটর (Ceramic Capacitor): এটি সিরামিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় এবং এটি ছোট মানের ক্যাপাসিটরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  2. ইলেক্ট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর (Electrolytic Capacitor): এটি ধাতু এবং ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে তৈরি হয় এবং উচ্চ মানের ক্যাপাসিটরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  3. ট্যান্টালাম ক্যাপাসিটর (Tantalum Capacitor): এটি ট্যান্টালাম ধাতু দিয়ে তৈরি হয় এবং স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য ক্যাপাসিটরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  4. পলিয়েস্টার ফিল্ম ক্যাপাসিটর (Polyester Film Capacitor): এটি পলিয়েস্টার ফিল্ম দিয়ে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন ধরণের ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।

ক্যাপাসিটরের কাজ:

  1. চার্জ সঞ্চয় করা: ক্যাপাসিটরের প্রধান কাজ হলো বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয় করা।
  2. ফিল্টারিং: এটি বৈদ্যুতিক সংকেত ফিল্টার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  3. টিউনিং: রেডিও এবং টেলিভিশনের মতো ডিভাইসের ফ্রিকোয়েন্সি টিউনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  4. পাওয়ার ফ্যাক্টর সংশোধন: পাওয়ার সিস্টেমে পাওয়ার ফ্যাক্টর সংশোধন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ক্যাপাসিটরের ব্যবহার:

ক্যাপাসিটর বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  1. ইলেকট্রনিক ডিভাইস: রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে।
  2. পাওয়ার সাপ্লাই: পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটে, যেমন ফিল্টার এবং রেগুলেটরে।
  3. অটোমোবাইল: গাড়ির ইগনিশন সিস্টেম এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক অংশে।
  4. টেলিকমিউনিকেশন: টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইস এবং সার্কিটে।

কিভাবে বোঝা যাবে ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে গেছে

ইলেকট্রনিক্স এর কাজ শিখতে গেলে কি কি কম্পোনেন্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জানা লাগবে দেখুন:বিস্তারিত

ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তা বোঝার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং পদ্ধতি দেওয়া হলো:

লক্ষণ:

  1. দৃশ্যমান ক্ষতি:
    • ফুঁলানো বা বিস্ফোরণ: ক্যাপাসিটরের উপরে যদি ফুঁলানো বা বিস্ফোরণের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে এটি সম্ভবত নষ্ট।
    • লিক হওয়া: ক্যাপাসিটরের মধ্যে থেকে তরল পদার্থ লিক হলে এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  2. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ত্রুটি:
    • ডিভাইস চালু না হওয়া: যদি কোনও ডিভাইস চালু না হয় বা ঠিকমতো কাজ না করে, তবে এটি ক্যাপাসিটর সমস্যার কারণে হতে পারে।
    • অস্বাভাবিক শব্দ: ক্যাপাসিটর নষ্ট হলে অস্বাভাবিক শব্দ করতে পারে।

রেজিস্টার এর মান বের করা শিখুন খুব সহজে:VIDEO

পরীক্ষার পদ্ধতি:

  1. ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন:
    • ক্যাপাসিটরটির ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন করুন এবং উপরে উল্লেখিত কোনও দৃশ্যমান ক্ষতির লক্ষণ আছে কিনা দেখুন।
  2. মাল্টিমিটার ব্যবহার:
    • ক্যাপাসিট্যান্স পরীক্ষা: মাল্টিমিটারে ক্যাপাসিট্যান্স মোড নির্বাচন করুন এবং ক্যাপাসিটরের প্রাথমিক মানের সাথে মাপা মান তুলনা করুন।
    • অবস্থা পরীক্ষা: মাল্টিমিটার দিয়ে ক্যাপাসিটরের দুইটি লিড সংযোগ করে এটি পরীক্ষায় সক্ষ।
  3. পদ্ধতি:
    • ক্যাপাসিটরটি সম্পূর্ণভাবে ডিসচার্জ করুন।
    • মাল্টিমিটারকে রেজিস্ট্যান্স মোডে রাখুন।
    • মাল্টিমিটার প্রোবগুলি ক্যাপাসিটরের লিডের সাথে সংযুক্ত করুন।
    • রেজিস্ট্যান্স পড়া পরিবর্তন হচ্ছে কিনা দেখুন: একটি ভাল ক্যাপাসিটরের রেজিস্ট্যান্স প্রথমে কম হবে এবং তারপর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। যদি এটি স্থির থাকে বা কোনও পরিবর্তন না হয়, তাহলে ক্যাপাসিটরটি নষ্ট।
  4. ইএসআর (Equivalent Series Resistance) মিটার:
    • ইএসআর মিটারের সাহায্যে ক্যাপাসিটরের ইএসআর পরিমাপ করতে পারেন। উচ্চ ইএসআর মান ক্যাপাসিটরটি নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
  5. ক্যাপাসিটর টেস্টার:
    • নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটর টেস্টার দিয়ে ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স, ইএসআর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করুন।

Leave a Comment