তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। Thermal power plant working principal

থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট কি?

আজকে আমরা জানবো যে থারমাল পাওয়ার প্লান্টে মানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে স্পেসিফিক্যালি আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব কয়লার সাহায্যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো চলে সেগুলো কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে । তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ,একটা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বিশাল বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে প্রায় 34 স্কয়ার কিলোমিটার আর এই জায়গাটা বিভিন্ন বিভাগ করে থাকে যেহেতু কয়লার সাহায্যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তাপ উৎপন্ন করে জলকে গরম করা হয় এজন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে কয়লা প্রয়োজন হয় তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে বিদ্যুৎ তৈরি করার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে ।
এখানে এক মাস থেকে 45 দিনের কয়লার স্টক করে রাখা হয় যেটা প্রায় এক দেড় মিলিয়ন টন আর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে জায়গায় কয়লা স্টক করে রাখা হয় সেই জায়গাটাকে কুলিয়ার বলা হয় । এটা বিশাল বড় জায়গা পুরো একটা ট্রেন এর মধ্যে প্রবেশ করে যায় কারণ ম্যাক্সিমাম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার ট্রেন এর সাহায্যে আসে তারপর থেকে ওই কয়লা গুলোকে আনলোড করে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

যখন কয়লা ফুল ইয়ারে স্টক করে রাখা হয় তখন একটা কয়লা একেক ধরনের আকারের হয় । কোনটা বড় কোনটা ছোট এইজন্যই কয়লা গুলোকে ক্রাশ মেশিনের মধ্যে পাঠিয়ে ছোট ছোট করে ভেঙে দেওয়া হয় । তারপরও ছোট ছোট কয়লা গুলোকে পাউডারের পরিণত করার জন্য বলমিল বলে একটা মিলের মধ্যে পাঠানো হয় ।

এখানে ওই কয়লা গুলো একেবারে পাউডারের মত হয়ে যায় এগুলো এখানে একেবারে সুক্ষ সুক্ষ কনা তে পরিণত হয় মানে যেরকম পাউডার আমরা মুখে মাখি একেবারে ওরকম ধুলোর মতো । এটা করা হয় যাতে কয়লা গুলো সম্পূর্ণভাবে জ্বলে যেতে পারে এবং কাঠের ছাই কম উৎপন্ন হয়।

এটা তুমি নিজেও বুঝতে পারবে যখন তুমি কোন বড় কাঠের গুড়ি কে জ্বালাবে তখন দেখবে যে অনেক বেশি ছাই উৎপন্ন হয় ,কিন্তু ওই কাঠ টা কেই যদি গুঁড়ো করে পিষে ফেলে জালানো হয় তাহলে দেখবে ছাই কম উৎপন্ন হবে আর এটা করলে কয়লা গুলো একেবারে ভালোভাবে জ্বলে যায় এবং কয়লার নষ্ট কম হয় এরপর ওই কয়লার ডাস্ট টা চলে যায় বয়লার মেশিন এখানে সবসময় আগুন জ্বলছে আগুন.।

ক্রমাগত জ্বালিয়ে রাখার জন্যই এই কয়লা টাকে ব্যবহার করা হয় এর মধ্যে উপরে সরু সরু পাইপের মধ্যে জল থাকে। বয়লারের প্রধান এবং একমাত্র কাজ হলো জলটাকে গরম করে বাষ্পে পরিণত করা এর মধ্যে যখন কয়লা পুড়ে তখন দু’ধরনের ছাই উৎপন্ন হয়। একটা ছাই ভাড়ি হয় যে টাওয়ারের নিচে জমা হয় এবং আরেকটা ছাই হালকা হয় যেটাকে আমরা ফ্লাই অ্যাশ বলি সেটা বয়লার থেকে সরু সরু লম্বা চিমনির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায় ।

যে ভারি হয় মানে বটম-অ্যাশ সেটাকে সিমেন্ট কোম্পানিতে পাঠানো হয় কারণ সিমেন্ট তৈরি করতে এই ছাই টা কাজে লাগে । কিন্তু যে ছাই টি বাইরে বেরিয়ে যায় ওর মধ্যে তো প্রচুর পরিমাণে কয়লা থাকে আর সেটা যদি পরিবেশে বেরিয়ে যায় তাহলে ভাবুন যে ওই এলাকার কি অবস্থা হবে । এই জন্য যে লম্বা লম্বা চিমনি গুলো থেকে ফ্লাইং একটা বের হয় সেখানে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রিসিপিতাতর বসানো থাকে যেটা ছাই গুলোকে পরিবেশে মানে বায়ুমন্ডলে বেরিয়ে যাওয়া থেকে আটকায় তাহলে এতদুর আমরা বুঝলাম যে জলটা কিভাবে গরম হচ্ছে ।

ভেবে দেখেছেন যে স্টিম কে যদি প্রেসার এর মধ্যে রাখা যায় তাহলে সেটা কত ফোর্স ক্রিয়েট করতে পারে । বাড়িতে আপনার ওইটুকু একটা প্রেসার কুকার তার মধ্যে যখন প্রেসার তৈরি হয় তখন সেটা প্রেসার কুকারে সিটিকে একদম উপরে তুলে দেয় ।এবার ভাবুন হিউজ পরিমান এ যদি কোন বাষ্প কে প্রেসার এর মধ্যে রাখা যায় তাহলে তার মধ্যে কতটা পরিমাণে শক্তি তৈরি হয়ে যায় । আর এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিদ্যুৎ তৈরি করি ।

অন্য একটা জায়গায় একটা বিশাল বড় টারবাইন লাগানো থাকে আর যার সাথে জোড়া থাকে একটা মটর । একটা জিনিস হয়তো জানতে পারো যদি মোটরে বিদ্যুৎ প্রয়োগ করা হয় ,তাহলে কোন মোটর ঘোরে । কিন্তু এই মোটরটি কে যদি উল্টা ঘোরানো যায় তাহলে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। ঠিক যেরকম ভাবে জেনারেটর কাজ করে ।

এখন ব্রয়লারে যে বাষ্প তৈরি করা হয়েছিল সেটা ওই টারবাইন এর মধ্যে খুব প্রেসারে প্রয়োগ করা হয় । এর ফলে টারবাইন টা খুব দ্রুতগতিতে ঘুরতে থাকে এবং ওই টারবাইনের সাথে একটা মোটর যুক্ত করা থাকে । মোটরটি প্রায় 3000 আরপিএম ঘুরতে থাকে এবং উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ বিতরণ ট্রান্সমিশন পদ্ধতি:

এবার এখান থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটা চলে যায় একটা ট্রান্সফরমারে । এই ট্রান্সফরমারটি step-up পাওয়ার ট্রানসফর্মের হয়। এই step-up ট্রান্সফর্মার উৎপন্ন হওয়া ভোল্টেজ থেকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয় । এটি বাড়িয়ে দেয় প্রায় দুই লাখ কুড়ি হাজার ভোল্ট করে দেয় যেটা বিদ্যুতের তারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায় । এবং যে এলাকায় বিদ্যুৎ পাঠানোর দরকার হয় সেখানে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার লাগিয়ে ওই ভোল্টেজ কে কমিয়ে বিদ্যুৎ কে এলাকায় সাপ্লাই করে দেওয়া হয়।

এইজন্য আপনি দেখে থাকতে পারেন যে যে জায়গায় বিদ্যুৎ তৈরি হয় সেখানকার পাওয়ার ট্রান্সফরমার থেকে ওই এলাকাতে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না । তার কারণ এর ভোল্টেজ অনেক বেশি থাকে ।এবার আর একটা জিনিস জানার আছে যে বাষ্প টির সাহায্যে টারবাইন ঘোরানো হয়েছিল সেটা কোথায় গেল ।তো টারবাইন এর নিচে একটা ওয়াটার চেম্বার থাকে বাষ্প টারবাইন এর মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে যখন ঠান্ডা হয়ে যায় তখন সেটা জলে পরিণত হয়ে ওই চেম্বারে মধ্যে জমা হতে থাকে।
পুনরায় বয়লার এর মধ্যে পাঠিয়ে আবার ব্যবহার করা হয় মানে আবার গরম করে বাষ্পে পরিণত করা হয় । বাষ্প কে ব্যবহার করার পরে আবার তাকে ঠান্ডা করা হয় যাতে আমরা পুনরায় ওকে বয়লারে ব্যবহার করতে পারি । এর জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বড় বড় চুল কার মতো একাধিক কুলিং টাওয়ার লাগানো থাকে । যদি আপনি কখনো কোনো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দেখে থাকেন তাহলে দূর থেকে দেখতে পাবেন যে বড় বড় চলার মত যে সমস্ত টাওয়ারগুলো থাকে তাদের উপর থেকে একটা ধোঁয়া বেরোয় ।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় :এখানে দেখুন

তখন হয়তো তোমার মনে হয় যে এই ধোঁয়া টা যে বেরোচ্ছে এর থেকে তো প্রচুর পরিবেশ দূষণ হচ্ছে কিন্তু না ওগুলো আসলে বাষ্প হয় যেগুলো পুনরায় বায়ুমন্ডলে বাতাসের সঙ্গে মিশে যায় এর থেকে কোন পরিবেশ দূষণ হয় না । লম্বা-লম্বা এবং সরু সরু যে টাওয়ারগুলো থাকে যেখান থেকে ধোঁয়া বেরোয় সেই ধোঁয়া থেকে পরিবেশ দূষণ হতে পারে কিন্তু বড় বড় চলার মত যে টাওয়ারগুলো থাকে সেখান থেকে যেটা বের হয় ওটা একচুয়ালি ধোয়া হয় না ওটা 41 জলীয়বাষ্প হয় আর এর মধ্যেই জলীয় বাষ্প কি ঠান্ডা করে আবার জলে পরিণত করা হয় ।

যেহেতু সম্পূর্ণ জলীয়বাষ্প জলে পরিণত হয় না এই জন্য যেটা বেঁচে থাকে সেটা উপর দিয়ে বেরিয়ে যায় ।এ কুলিং টাওয়ার গুলোর নিচে একটা বড় বেসিন থাকে। বাষ্প জলে পরিণত হওয়ার পর ধীরে ধীরে ওই বেসিনের মধ্যে জমা হয় ,যাকে পুনরায় পাইপের মাধ্যমে ব্রয়লারের দিকে দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো খেয়াল করতে পারো যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কোন বড় নদীর ধারে কিংবা কোনো বড় জলাশয় এর পাশেই তৈরি করা হয় ।

এর কারণটা কি আশা করি বুঝতে পেরেছ যে একটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার জন্য জল অবশ্যই অবশ্যই দরকার ।সাধারণত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোন নদীর জল কে বা কোনো বড় জলাশয় এর জল কে সরাসরি ব্যবহার করেনা ।নদীর জলের পাম্পের সাহায্যে তুলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব রিজার্ভার বা জলাশয় এর মধ্যে স্টোর কোরে রাখা হয় তারপর ওই জল থেকে দূষিত পদার্থ এবং মিনারেলগুলো কে বের করে নেওয়া হয় । যাতে জলের মধ্যে H2O ছাড়া অন্য কোন মেটেরিয়াল না থাকে । তারপর ওই জলকে ইকন আমার নামক বয়লারের সঙ্গে লাগানো একটা জলের ট্যাংকের মধ্যে পাঠানো হয়।

এরপর ওই জল বাষ্পে পরিণত করে আবার পুনরায় টারবাইনে ক্রমাগত এই ভাবেই এই সাইকেল চলতে থাকে যার ফলে আমরা বাড়িতে বাড়িতে লাইট পাখা চালাতে পারি এবং বিভিন্ন ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি চালাতে পারি তো বন্ধুরা মোটামুটি এরকম ভাবেই প্রত্যেকটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় ।

Leave a Comment